১ম পর্ব
অফিস থেকে সবে বের হয়েছি। এগিয়ে যাচ্ছি গলির মাথার দিকে। টং দোকান থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে বড় রাস্তার দিকে হেঁটে যাবো। তারপর ওখান থেকে মেইন রোডে যেয়ে বাস ধরে সোজা বাসা।
আমার অফিস লালমাটিয়া। এদিকে কোন বাস ষ্ট্যান্ড না থাকায় শংকর পর্যন্ত হেঁটে যেতে হয়। সন্ধ্যের এই বেলাটায় গলিটা কিছুটা অন্ধকার থাকে। আশেপাশে বেশ কিছু কৃষ্ণচুড়া গাছ দাড়িঁয়ে আছে। স্বাভাবিকভাবেই এখানে দিনের বেলাতেও আলো কম। রাতের বেলা সেটা আরো গাঢ় হয়ে উঠে। আর লোডশেডিং হলে তো কথাই নেই। তখন এ পথ ধরে হাঁটতে আমার বেশ ভয় করে। যদিও এটার মূল কারণ গলির মাথায় দোকানের ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা বিশালকায় অশ্বথ গাছটি। শুনেছি ওখানে ভুত থাকে।
সিগারেটটা ধরিয়ে সবে একটা টান দিয়েছি এমনি সময় পকেটে থাকা মোবাইলটা বেজে উঠলো। বের করে দেখি চাচীর ফোন। আমি রিসিভ করলাম।
- ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন। তা কহন মরছে .........জিজ্ঞেস করতে গিয়েছি কেবল, তখনি লাইন কাটার টুং শব্দ হলো। বুঝতে পারছি চাচী এখন বেশী কথা বলার অবস্থায় নেই।
মোবাইলটা পকেটে রাখতে যাবো তখনি মনে হলো অফিসের বসকে জানিয়ে দেওয়া দরকার, আমি কাল অফিসে আসছি না। আমাকে এখুনি বাড়ি যেতে হবে। বসকে ফোন করে সব জানিয়ে আমার রুমমেটকে কল দিলাম। ওকেও কারণ জানিয়ে বলে দিলাম আজ আর মেসে ফিরছিনা।
হাতের সিগারেটটা বিস্বাদ লাগছে। ওটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে জলদি পা বাড়ালাম। আমাকে এখুনি গুলিস্থানের বাস ধরতে হবে। তারপর ওখান থেকে সোজা কিশোরগঞ্জ।
গুলিস্থান যেয়ে অপেক্ষামাণ যে বাসটা পেলাম তাতেই উঠে বসলাম। কিছুক্ষণ বাদেই ছেড়ে দেবে। আমি সামনের সীটের ব্যাকরেস্টে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে চাচার কথা ভাবছি। উনি আজ দু’বছর ধরে অসুস্থ্য। ক্যানসারের শেষ স্টেজ চলছে। সব রকম চিকিৎসাই ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই উনার মারা যাওয়াটা অনাহুত ছিল না। আমার বাবা নেই। এখন চাচাও চলে গেলেন। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। এমনি সময় পিঠে হাত পড়তেই মাথা তুললাম।
হুম, তা তো হইছিই। আমি চাচার দিকে ফিরে বললাম। তা তুমি ঢাকা আসছো কবে?
আইজ সকালেই আসছি। অহন বাড়ি ফিইরা যাইতাছি। তা তুই এই বাসে কেন? কই যাইতাছোস?
শেষের প্রশ্নটা আমায় আবারও অবাক করলো। তারমানে মেঝ চাচা মারা যাবার খবর ছোট চাচা এখনো জানেন না। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব। চাচী আমাকে ফোন করে জানালো, অথচ ছোট চাচাকে জানালো না। এটা হতেই পারেনা। নিশ্চয়ই এতে কোন রহস্য আছে। ঠিক করলাম, আমিও এখন কিছু বলবোনা।
তা ঢাকা এলে, আমাকে জানালে না যে! আমি স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন করলাম।
জানাইতাম কি কইরা! মোবাইলটা নষ্ট হইয়া গেছিল। ওইডা ঠিক করনের লাইগাই তো ঢাকা আইছিলাম।
তা মোবাইল কি ঠিক হইছে?
হ হইছে। বললেন চাচা। আমাকে আবারও মুখ খুলতে দেখে যোগ করলেন। আরে বিহালেই ফিইরা যামু দেইখা তোরে জানাই নাই। তা কইলিনা, তুই কই যাস।
হঠাতই একটা দরকার পইড়া গেল। তাই যাইতাছি। আমি সামনের দিকে ফিরে স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম। বাড়ি যাবার কারণটা ইচ্ছে করেই চেপে গেলাম, যেহেতু আগেই ঠিক করেছি বলবো না। মেঝো চাচা মারা গেছে এটা না হয় বাড়িতে যেয়েই জানুক।
তা তুইও তো আমারে জানাইলি না। চাচার কন্ঠে কিছুটা অভিমান।
তোমারে কল দিছিলাম তো। মোবাইল বন্ধ পাইছি। আমি ইচ্ছে করেই মিথ্যে বললাম।
হ তাও ঠিক। আমার মোবাইল তো বন্ধ আছিল।
এখন কি অন হইছে? প্রশ্নটা করলাম যেহেতু ভয় পাচ্ছি যে কোন সময় চাচার মোবাইলে বাড়ি থেকে ফোন আসতে পারে।
না। মোবাইল ঠিক হইলেও হারাদিন চার্জ তো দিতারি নাই।
আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। বাড়ি পৌঁছানোর আগে চাচাকে নিয়ে আর কোন চিন্তা নেই।
নরসিংদীর কিছুটা আগে বাস থেমে গেল। জানালা দিয়ে মাথা বের করে দেখি সামনে বিশাল জ্যাম। ঘটনা কি পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া একজনকে জিজ্ঞেস করলাম। বললেন বিকেলে একটা বাস একসিডেন্ট করেছে। এখান থেকে কিছুটা সামনে। ড্রাইভার সহ বেশ ক'জন যাত্রী মারা গেছে। এখন সেই বাসটাকেই উদ্ধার করা হচ্ছে। এমনি সময় পাশ থেকে চাচা উঠে দাঁড়ালেন। তারপর ক্ষানিকটা নিচু হয়ে আমার পাশ দিয়ে জানালা গলে বাইরে মুখ ফেরালেন।
বাইরে যে লোকটা এতক্ষণ আমার সাথে কথা বলছিল সহসা তার চোখ পড়লো চাচার উপর। মুহুর্তেই তার চোখ দুটো আতংকে বড়বড় হয়ে গেল। ওরে বাবারে বলেই সে পিছু ফিরে একটা দৌঁড় দিল।
৩য় পর্ব
ছোট চাচা এসবের কিছুই খেয়াল করলেন না। তিনি আগের মতই মাথা ঢুকিয়ে আবার বসে পড়লেন। আমি পেছন ফিরে লোকটাকে খোঁজবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু, অন্ধকারে কিছুই দেখতে পেলাম না।
কিছুক্ষণ আগে দেখা লোকটার আচরণ আমাকে অবাক করেছে। মাথা ঘুরিয়ে চাচার দিকে ফিরলাম। উনি আগের মতই সীটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন। তার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখলাম না।
বাস আবার চলতে শুরু করেছে। এক টানে ভৈরবে এসে থেমে গেল। তবে এবার আর জ্যাম নয়। জার্ণী ব্রেক। যাত্রীদের অনেকেই নেমে গেল হালকা নাস্তাপানি করতে। আমার খুব স্মোক করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু, নামতে গেলে চাচাকে ডেকে উঠাতে হবে। উনি না সরলে নামতে পারবোনা।
এমনি সময় চোখ খুললেন চাচা। বাসেততে নামবি নাহি ? আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রশ্ন করলেন।
হ নামতে চাইছিলাম।
যা তাইলে। চাচা উঠে গিয়ে আমাকে বের হবার সুযোগ করে দিলেন।
তুমি নামতানা ? আমি বের হতেই চাচাকে আবার বসতে দেখে অবাক হলাম।
না। তুই যা। আমি এট্টু জিরায়া লই।
অগত্যা আমি নেমে গেলাম। পাশেই একটা দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে একটু আড়ালে অন্ধকার মত জায়গায় দাঁড়ালাম। ভাবছি এ কিভাবে সম্ভব ? চাচার মত চেন স্মোকার এতক্ষণ সিগারেট না টেনে থাকছে কি করে !
ভৈরব ছাড়তেই ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বের করেই দেখি আম্মা’র ফোন।
আম্মা ফোন কেটে দিল। বাইরে অন্ধকারে তাকালাম। বাস যে গতিতে এগুচ্ছে আরো ঘন্টা দুয়েক লাগবে কিশোরগঞ্জ পৌঁছুতে।
ষ্টেশনে যেয়ে বাস থেকে নামতেই একটা অটো পেয়ে গেলাম। পেসেঞ্জারের জন্য হাঁক ছাড়ছে। সামনে ড্রাইভারের পাশে দুজন বসে আছে। পেছনের সীটটা খালি পেয়ে আমরা উঠে বসলাম। অটো চলতে শুরু করলো।
আমি ঘড়ি দেখলাম। রাত প্রায় ১১টা বাজে। চারিদিকে কালি ঘোলা অন্ধকার। হেড লাইটের আলো আছড়ে পড়ছে সামনের পিচ ঢালা পথে। এর বাইরে পুরোটাই ছেয়ে আছে কালোয়। কারোই মুখ দেখা যাচ্ছে না।
তখনি চোখ পড়লো চাচার দিকে। ভাই আফনে ......ক.........ক............ক ! লোকটা তোতলাতে লাগলো। পরমুহুর্তে অটো থেকে বের হয়েই রাস্তার পাশের ঢাল ধরে নেমে জোড়সে দৌঁড় লাগালো। নিমেষেই দোকানের ফাঁক গলে হারিয়ে গেল পেছনে ।
৪র্থ পর্ব
এবার আমি সত্যিই ভয় পেয়ে গেলাম। পরপর দু’বার একই ঘটনা ঘটায় খুব অবাক হয়েছি। ছোট চাচার দিকে ফিরলাম। তিনি ভাবলেশহীন।
ভয় পাইছোস? হেসে বললেন। আমি আছিনা। তারপর ড্রাইভার যেদিকে পালিয়েছে সেদিকে তাকিয়ে হাঁক ছাড়লেন। অই রমিজ্যা, ফলাইছোস কেন ? ভাড়া নিবিনা। তারপর আমার দিকে ফিরে যোগ করলেন। হেয় আমগোরে ডরাইছে। ভাবছে এত রাইতে আমরা ভুত আইছি। বলেই হো হো করে হেসে দিলেন।
মনে পড়লো ছোট চাচার সাথে এরকম রাত বিরেতে কত ঘুরে বেড়িয়েছি। আমি উনার দিকে আড়চোখে তাকালাম। কি নিশ্চিন্তে হেঁটে যাচ্ছে। জানেই না তার বেঁচে খাকা একমাত্র ভাইটাও আজ মারা গেছে। ভাবছি বাড়ি গেলে ঘটনা জানার পর তার মনের অবস্থা কি হবে। আমাকেই বা কি বলবে !
বাড়ির কাছাকাছি আসতেই আমি অস্থির হয়ে উঠলাম। আমাদের বাড়ির সামনে বড় পুকুর। পুকুরের এ পাড়ে পারিবারিক কবরস্থান। ওখানেই চাচাকে দাফন করার কথা। ওদিকে চোখ পড়তেই অন্ধকারে একটা জটলামত দেখতে পেলাম। কয়েকটা টর্চ লাইটের আলো এদিক সেদিক নড়ছে।
চাচাকে ওদিকে এগোতে দেখে হাত টেনে ধরলাম। আগে বাড়িত চল।
না। তুই যা। আমি দেইহা আহি ব্যপারডা কি। আমার মুঠো থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিলেন।
আমি আর বাধা দিলাম না। উনাকে কবরস্থানের দিকে এগোতে দেখে আমি বাড়ির পথে হাঁটা দিলাম।
আমি খাঁটের কিনারায় ধপ করে বসে পড়লাম। কেঁদে ফেললাম হু হু করে । মা আমাকে জড়িয়ে নিলেন। কান্দিস না বাজান। তোর কফালে নাই। তাই দেখবার ফারোস নাই।
হ বাজান। তোর লাইগ্যা হেরা মেলা খাড়াইছিল। কিন্তুক দেরী দেইখ্যা কবর দিয়া লাইছে। পাশে দাঁড়ানো চাচীও যোগ দিলেন মায়ের সাথে। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।
সুমন আইছোস ? এত দেরী করলি কেন বাজান ? পরিচিত কন্ঠ শুনে আমি সটান দাঁড়িয়ে গেলাম। দৌঁড়ে গেলাম পাশের রুমে। মেঝো চাচা শুয়ে আছে। এ কিভাবে সম্ভব। চাচা তো দিব্যি বেঁচে আছেন। তাহলে মরলো কে ? কাকে ওরা কবর দিল ? আমার মাথা ঘুরতে লাগলো।
৫ম পর্ব
তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে লাগলাম। তড়িৎ খাঁটের ষ্ট্যান্ড ধরে পতন ঠেকালাম। ধপ করে বসে পড়লাম খাঁটের পাশটায়। মেঝো চাচা আমার পিঠে হাত রাখলেন। কান্দিস না বাপ। তোর বাপের পরে ছোডও আইজকা আমাগো ছাইড়া গেল। আমি যে একলা হইয়া গেলামরে।
কিন্তু এসব কিছুই আমার মাথায় ঢুকছে না। দৌঁড়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। দ্রুত এগোলাম কবরস্থানের দিকে। তখনো সবাই জটলা করছে। কিন্তু তার মাঝে ছোট চাচাকে কোথাও দেখতে পেলাম না।
এবার আমি নিশ্চিত হলাম। তার মানে পুরোটা রাস্তা ছোট চাচাই ভুত হয়ে আমাকে সঙ্গ দিয়েছে। সে কারণেই অটোর ড্রাইভার রমিজ চাচাকে দেখে ভয় পেয়ে পালিযেছে। ব্যপারটা বুঝতে পেরেই আমার গাঁ কাঁটা দিয়ে এলো। তড়িৎ মানুষজনের ভীড়ের সাথে মিশে ঘরে চলে এলাম।
ঘরে এসে আম্মার খাঁটে শুয়ে পড়লাম। মাথা কিছুতেই কাজ করছে না। এসব কথা কউকে বললে হেসেই উড়িয়ে দেবে। মানুষটা সত্যিই ভুত ছিল, এটা কেউই বিশ্বাস করবে না। আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতেই এক সময় ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই আমার মাথা পরিস্কার হয়ে গেল। তখনি খটকাটা নজরে এলো। মা বলেছেন একসিডেন্টে চাচার মুখ থেতলাইয়া নষ্ট হয়ে গেছিল। বুঝলাম রমিজ না হয় এলাকার ছেলে চাচাকে চেনে। তাই আমার সাথে তাকে দেখে ভুত ভেবে ভয় পেয়েছে। কিন্তু, নরসিংদীর সেই লোকটা তো আর চাচাকে চেনে না। তাহলে সে কেন চাচাকে দেখে অমন ভয় পেল?
মাথাটা আমার আবার গুলিয়ে গেল। আর তখনি পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো। বের করে স্ক্রীণে তাকাতেই আমার বুকটা ধ্বক করে উঠলো। ফোনটা এসেছে ছোট চাচার মোবাইল থেকে।
শেষ পর্ব
আমি ভুতে বিশ্বাসী নই। যদিও রাত হলেই ভয়টা তারিয়ে বেড়ায়। কিন্তু এখন দিন। কাজেই ফোনটা ছোট চাচার ভুতে করেছে এটা কেউ আমাকে বিশ্বাস করাতে পারবে না। সে কারণেই সাহস করে ফোনটা রিসিভ করলাম।
হোন, হগগলের মত তুইও আমারে ভুত ভাবোস নাই ত। আমি তর চাচাই। উনাকে বেশ উত্তেজিত মনে হলো।
আমি এদিক ওদিক তাকালাম। আম্মা বা মেঝো চাচী কাউকে দেখতে পেলাম না। আস্তে করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলাম। উঠোন পেরিয়ে ক্ষেত। তার আইল ধরে বাড়ির বাম পাশ ঘেষে পিছনে চলে গেলাম। তারপর জঙ্গলের ভিতর দিয়ে সোজা বিলে।
বিলের একটু ভিতর দিকে একটা ঢিবি মতন। ওটার উপরেই ডিপটিউবওয়েল এর ঘরটা দেখতে পেলাম। একটা সাঁকো মতন এগিয়ে গেছে ওটার দিকে। আমি ওটা ধরে সাবধানে হেঁটে গেলাম। ঘরে ঢুকেই ছোট চাচাকে দেখতে পেলাম একটা চৌঁকিতে বসে আছে। চেহারাটা বিধ্বস্থ।
ঘটনাটা কি খুইল্যা কও তো। আমি চাচার পাশে বসতে বসতে জানতে চাইলাম।
হোন কাইল আমি হাছাই ঢাহা গেছিলাম। মোবাইল সারাইয়া আওনের সময় আমার বাস একসিডেন্ট করে। আমি মাথাত বাড়ি খাই। হেরফর দৃুনিয়া আন্ধার। মাইনে আমি অজ্ঞান অয়া ফরি। জ্ঞান ফিরনের পর দেহি আমি হাসফাতালে। হুনলাম এইডা ঢাহা মেডিকেল। নরসিংদীত আমার জ্ঞান ফিরাইতে না ফাইরা ইমার্জেন্সী এহানে আনছে। ভাইবলাম আমারে নিয়া হগগলে চিইন্তা করবো। তাই তাড়াতাড়ি গুলিস্থান গিয়া বাসে উডলাম। তারফরই তো তর লগে দেহা। এক নাাগারে কথাগুলো বলে থামলো চাচা।
এবার বুঝলাম নরসিংদীর লোকটা কেন চাচাকে দেখে আঁৎকে উঠেছিল। তারমানে চাচাকে যখন অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তখন ওই লোকটা ওখানে ছিল। সে হয়তো ভেবে নিয়েছিল চাচা মারা গেছেন।
একটা রহস্যের মীমাংসা হতেই আরেকটা চাড়া দিয়ে উঠলো। তাহলে কাকে চাচা ভেবে কবর দেওয়া হলো ? কেন কারো সন্দেহ হলোনা যে, লোকটা আমাদের ছোট চাচা নয়।
কথাটা চাচাকে পাড়তেই উনি বললেন, এইডা মনে অয় আমার ফাশে যে ছেড়াডা বইছিল হেইডা।
কিন্তুক চাচী তো কইলো হের শার্ট এর ফহেটে তোমার দোহানের কার্ড আছিল। আমি জানতে চাইলাম।
হ, হেইডা ত আমিই দিছিলাম। বাসে উডনের ফর হের লগে ফরিচয় অইলো। দেখলাম আমরা হমান বয়সী। গায়ের রঙডাও আমার মত। হের হরিলডাও আমার মত হুকনা। আমগো অনেক মিল। তাই আমরা দোস্ত অইলাম। হেরে আমার দোহানের কার্ড দিয়া আইতে কইলাম।
এবার পুরো বিষয়টা আমার কাছে ছবির মত পরিস্কার হয়ে গেল। নিশ্চয়ই চাচার পাশের সীটের ওই ছেলেটা একসিডেন্ট হবার সাথে সাথেই মারা গিয়েছিল। বুক পকেটে প্রাপ্ত কার্ডের ঠিকানা অনুযায়ী পুলিশ ধরেই নিয়েছিল সে এই বাড়ির ছেলে মানে আমার চাচা। তাই ডেডবডি আমাদের বাড়ি নিয়ে এসেছিল। যেহেতু লাশের মুখ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চেহারা চেনা যাচ্ছিলনা, তাই এই বাড়িরও কেউ কোন সন্দেহ করেনি।
না। কাছত যাওনের আগেই হেগো কথায় সব বুইজা ফালাইলাম। তাই আর ওই দিহে না যাইয়া বাড়ির ফিছে রওয়ানা দিলাম।
বুঝলাম। অহন কথা হইলো কবরের লাশটা উডাইতে হইবো। তারপর হেইডা পোলাডার বাড়িত ফাডানোর ব্যবস্থা নেওন লাগবো। আমি চিন্তিত মুখে বললাম।
ওইডা কোন ব্যাফারইনা। চাচা উঠে দাঁড়িয়ে আমার কাঁধে হাত রাখলেন। ছেড়াডা কইছিল হের নাম রানা। বাড়ি তাড়াইল। বাজারে হেগো একটা ফ্যাথলজি আছে। আমাগো চেয়ারম্যনরে কইলে হেই পুলিশে খবর দিয়া সব ব্যবস্থা নিব।
তাইলে চল আর দেরী না কইরা চেয়ারম্যানের বাড়িত যাই। বলেই পাম্প ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। ছোট চাচাও আমার পিছু নিল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
আমি ভুতে বিশ্বাসী নই। যদিও রাত হলেই ভয়টা তারিয়ে বেড়ায়।
২৪ জানুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৭০ টি
সমন্বিত স্কোর
৪.৭২
বিচারক স্কোরঃ ২.২২ / ৭.০পাঠক স্কোরঃ ২.৫ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।